বোয়ালমারী প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সালথায় পুর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের ২ নারী ও ১শিশুকে কৌশলে খাবারের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে দুর্ধর্ষ চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে চেতনা ফেরার পর বুধবার (২ জুলাই) বিকাল চারটার দিকে ঘটনার বিবরণ দিলেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ।
গত রবিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাতে সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙারদিয়া গ্রামের মুক্তার মাতুব্বরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। চেতনানাশকের প্রভাবে অসুস্থরা হলেন গ্রামটির মোক্তার মাতুব্বরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৫৫), কন্যা গোলাপি আক্তার (৩৭) ও নাতি রাসেল মোল্যা (১০)।
ঘটনার দিন বাড়িতে কোনো পুরুষ না থাকায় প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মৃত কাদের সরদারের ছেলে বালাম সরদার, আকমল সরদার গং কৌশলে খাবারের সাথে চেতনানাশক ব্যবহার করে তাদের অচেতন করে ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ধান, চাল, পেঁয়াজসহ কয়েক লাখ টাকার দামী মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন গোলাপি আক্তার জানান- ঘটনার দিন দুপুরে রান্না করে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে মা ও মেয়ে গোসল করতে গেলে তাদের ঘরে ঢুকে খাবারের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে রাখে প্রতিপক্ষের লোকজন। গোসল করে ফেরার পথে প্রতিপক্ষের সরদার পাড়ার ওবায়দুর, কালাম, আকমল, তুহিন, শিপন, নাঈমকে বাড়ির আশপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। গোলাপি আক্তার আরও বলেন - তারা মিয়া, সরোয়ার, খায়ের লিটনদের সাথে আগে থেকেই আমাদের দ্বন্দ্ব রয়েছে তাদের নেতৃত্বেই এই কাজ সংগঠিত হয়েছে। সাব বাক্স ভাঙ্গার শব্দ শুনে জেগে তাদের মালামাল লুট করতে দেখেছি।
আমরা গোসল করতে গেলে ওরাই খাবার চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়। আমার ছেলে দুপুরের স্কুল থেকে টিফিনে খেতে বাড়িতে আসে। সে রাঙারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, খেয়ে স্কুলে গিয়ে সে ক্লাস রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। ছুটি শেষে বাড়িতে এসেও আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ঐ খাবার খেয়ে কিছু সময় পরে মা ও আমিও অচেতন হয়ে পড়ি। এরপর রাতের কোন একসময়ে তারা এসে সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে যায় ।
বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম এখনো অসুস্থ, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যাশায়ী, মাঝে মাঝে চেতনা ফিরে পেলেও আবার অচেতন হয়ে পড়েন।
তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন - আমাদের ওয়ালসেট টিনের মেয়ে ও নাতি অচেতন হয়ে পড়ে ছিলো। ঘরের সাব বাক্স ভাঙ্গার শব্দ সে জেগে উঠে। ঘুম ভেঙে গেলে দেখে সরদার বাড়ির আট, দশজন আমাদের ঘরের মালামাল নিয়ে যাচ্ছে, সে তাদের বাধা দিতে উঠার চেষ্টা করলে আবার মাথা ঘুরে পড়ে যায় তারপরে কী হয়েছে সে বলতে পারে না।
তাদের প্রতিবেশী দুলাল মাতুব্বরের স্ত্রী নার্গিস বেগম বলেন, ওদের ফ্রিজে আমার মাছ রাখা ছিলো। সকালে আমি মাছ আনতে গেলে দরজা খোলা ও সবকিছু এলোমেলো দেখতে পেয়ে ওদের অনেক ডাকাডাকি করলেও কেউ সাড়া দেয় না। পরে ওদের স্বজনদের খবর দিলে তারা এসে বোয়ালমারী হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মোক্তার মাতুব্বরের নাতি জুবায়ের মোল্যা জানান, খবর পেয়ে আমি এসে দেখি নানী ও মা অচেতন হয়ে পড়ে আছে। মাথায় তেল পানি ঢাললেও তারা সুস্থ না হলে তাদের দ্রুত বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। মা কিছুটা সুস্থ হলেও নানু এখনও অচেতন হয়ে আছে। মাঝে মাঝে একটু জ্ঞান ফেরে আবার অচেতন হয়ে পড়ে।
সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আতাউর রহমান জানান, খবর পেয়ে সালথা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মুক্তার মাতুব্বরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ জনের নাম উল্লেখপূর্বক একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : অ্যাডভোকেট কোরবান আলী
Copyright © 2025 Boalmari Barta. All rights reserved.