
বোয়ালমারী প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির নবগঠিত পকেট কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল এবং সড়ক অবরোধ করেছে বিএনপির একাংশ। ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতে থাকা নেতাকর্মীদের নবগঠিত কমিটিতে স্থান দেওয়ায় শনিবার ২৫ অক্টোবর বিকালে এইসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি ওয়াপদা মোড়স্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে পৌরসদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় পৌরসভার ব্যস্ততম এলাকা ওয়াপদা মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ঘন্টাধিক কাল সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এতে মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, ২৩ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌরসভার ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন। দুটি কমিটিতে বিগত ১৭ বছর হামলা মামলা, জেল-জুলুম সহ্য করা ত্যাগী ও ছাত্রদল, যুবদল থেকে উঠে আসা জিয়ার সৈনিকদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রকারান্তরে কমিটিতে স্থান পেয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর আওয়ামী লীগের পদ পদবিতে থাকা একাধিক নেতাকর্মী।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত নবগঠিত উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটির তীব্র সমালোচনা করেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে যারা বিএনপির দুর্দিনে পাশে থেকে দলকে ধরে রেখেছেন, সেই ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে নতুন কমিটিতে চিহ্নিত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “খন্দকার নাসিরুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত ব্যক্তিদের পদ দিয়েছেন। তিনি অর্থের বিনিময়ে বিএনপিকে বিক্রি করে দিয়েছেন।” “খন্দকার নাছিরুল ইসলামকে সংযত হতে হবে, বিএনপিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার যোগ্যতা বা অধিকার তার নেই।” এসময় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা নাসিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিল এবং নতুন করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তারা।
উল্লেখ্য ফরিদপুর -১ আসন (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) এ দলটির অভ্যন্তরিণ কোন্দলের জেরে দুটি শক্তিশালী গ্রুপ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও অপর গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছেন ছাত্রদল থেকে উঠে আসা বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি, ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু। সম্প্রতি নবগঠিত কমিটিতে সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু গ্রুপের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাবু, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন মিলু মিয়া, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা. আব্দুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কালা মিয়া, বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মুকুল, বিএনপি নেতা ও বার বার নির্বাচিত সাবেক মেম্বার এনায়েত হোসেন, মফিজুর কাদের খান মিল্টন, সাবেক কাউন্সিলর শেখ আজিজুল হক, সাবেক কাউন্সিলর শেখ আতিকুল আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ও উপজেলা জাসাসের আহবায়ক মো. শাহিন আনোয়ার, রুপাপাত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আবুল কালাম, চতুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি একলিম শরীফ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মাহাবুব হাসান সজিব, খন্দকার শামীম মোল্যা, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হোসেন সালেহ্ রুবেল, ছাত্রদল নেতা জাকারিয়া মোল্যা সুমন, জুয়েল, সাদমান পাপ্পু প্রমুখ।