
বোয়ালমারী প্রতিনিধি: আদম ব্যবসায়ী, প্রতারক মিজানুর রহমান খান ওরফে জাপান খানকে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর পল্টন থানা পুলিশ। মিজানুর রহমান খান (৫০) গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার নড়াইল গ্রামের মৃত মোক্তার খানের ছেলে। সে দীর্ঘদিন যাবত রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার সোলেমান প্লাজায় মিজান ট্রাভেলস্ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এজেন্সি খুলে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ বোয়ালমারী ও মুকসুদপুর থানায় একাধিক প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং চুরির মামলা চলমান রয়েছে।
 
তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ধানজাইল (শেখবাড়ী) গ্রামের ইছহাক শেখের ছেলে শেখ মো. মাহাবুব আলমের মাধ্যমে আবু বকর, মনির শেখ, তুহিন শেখসহ এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসায় পাঠানোর কথা বলে তার কাছ ২৫ লক্ষ টাকা নেয় মিজানুর রহমান। পরবর্তীতে তাদের মালয়েশিয়া পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় মাহাবুব আলম টাকা ফেরত চাইলে মিজানুর রহমান টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মাহাবুবকে প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনায় মাহাবুব আলম বাদী হয়ে ঢাকার বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা ৪০, তাং ২৭ অক্টোবর ২০২৫ খ্রি.। প্যানাল কোর্ট ১৮৬০ এর ৪২০, ৪০৬, ৫০৬ ধারায় প্রতারণ ও অর্থ আত্মসাৎ মামলাটি আমলে নিয়ে পল্টন থানা পুলিশ নথিভুক্ত করে। এ মামলায় ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পুরানা পল্টন থেকে প্রতারক মিজানুর রহমান গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
 
এছাড়া গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের উজানী বাজার এলাকার স্কুল শিক্ষক মো. ফরিদ মোল্যা (৫৭) বাদী হয়ে বিজ্ঞ আমলী আদালত মুকসুদপুর গোপালঞ্জে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। আদালত কাশিয়ানী থানা পুলিশকে মামলাটির তদন্তভার অপর্ণ করে। আদালতের নির্দেশে মিজানুর রহমান খান ওরেফ জাপান খানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর মামলাটি নথিভুক্ত করে থানাপুলিশ। উক্ত মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী ফরিদ মোল্যার ছেলে নাসিম মোল্যাকে ১৪ লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা নেন মিজানুর রহমান। এজেন্সির পেছনে দীর্ঘদিন ঘুরে ছেলেকে ইতালি পাঠাতে না পেরে টাকা ফেরত চাইলে বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান প্রতারক মিজান। টাকা ফেরত পেতে মুকসুদপুর থানায় মামলা করেন ফরিদ মোল্যা।
 
অপরদিকে মিজানুর রহমান ওরফে জাপান খানের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপর একটি চুরি ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন রুপাপাত ইউনিয়নের বিন্নাহুড়ি গ্রামের মো. আকরাম শেখের স্ত্রী গৃহিনী রুনা বেগম। ২০২১ সালে ৮ জানুয়ারি বাদীর বাড়ির টিনের বেড়া কেটে স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ দেড় লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। বসতঘরে বাতি জ্বালালে মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন চোরকে দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে বাদীর স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মিজানুর রহমান। পরিবারের লোকজনের চিৎকারে চুরির মালামালসহ পালিয়ে যায় চোরের দল। পরবর্তীতে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন রুনা বেগম।
 
এছাড়াও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানায় নারী নির্যাতনের অপর একটি মামলা হয় মিজানের বিরুদ্ধে। মামলার জিআর নম্বর ১৩৯, তাং- ০৮ জুলাই ২০২৩। প্যানাল কোর্টের ১৮৬০ ১৩৪/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৮০/৩৫৪/৪২৭/৫০৬/১১৪ ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
 
এলাকা সূত্রে জানা যায়, বহু অপকর্মের হোতা মিজানুর রহমান খান ওরফে জাপান খান ঢাকায় গিয়ে নিজ নামে মিজান ট্রাভেলস্ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এজেন্সি খুলে বসে। নিজ এলাকা কাশিয়ানীসহ পাশ্ববর্তী মুকসুদপুর, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা এলাকার সহজসরল মানুষকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মিজানুর রহমান খানের পিতা মোক্তার খান ছিলেন নড়াইল হাই স্কুলের নৈশপ্রহরী। কিন্তু তার ছেলে প্রতারণার মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। অল্প দিনেই সে নড়াইল বাস টার্মিনাল ও ব্যাসপুর বাসার মোল্যার বাড়ি সংলগ্ন মূল্যবান জমি, রাজধানীর পুরানা পল্টনের গাজী টাওয়ারে দোকান, নারায়ণগঞ্জে জাহাজের ব্যবসাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় তার নামে বেনামে একাধিক প্লট এবং ফ্ল্যাট রয়েছে। একজন নৈশপ্রহরীর ছেলে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।