1. boalmari@gmail.com : Korban Ali : Korban Ali
  2. boalmaribartabd@gmail.com : administrator : Hasan Mahmud Milu
  3. boalmaribarta@gmail.com : Kurban Ali : Kurban Ali
  4. jmitsolution24@gmail.com : support :
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ০৪:০৮ অপরাহ্ন

এনআইডির ইতিকথা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৪৪৪ Time View

এনআইডির বসতি নিয়া বিজ্ঞজনদের আলাপ আলোচনা তুঙ্গে উঠিয়াছে। এনআইডি নির্বাসনের বিপক্ষে আন্দোলনের খবর কাগজ কালি খরচ করিয়া পত্রিকায় ছাপা হইতেছে। ভারি ক্যামেরা কাঁধে মিডিয়া কর্মীগণ দৌড়ঝাঁপ করিয়া গলদঘর্ম হইতেছেন। সেবা গ্রহীতাগণ বিলম্ব সেবা প্রাপ্তিতে বিরক্ত হইতেছেন। মনে হইতেছে কোথা হইতে এক খন্ড বেরসিক ধুলিঝড় আসিয়া সবকিছু লণ্ডভণ্ড করিয়া ফেলিতেছে। রবি ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ শিরোনামের কবিতাটি এই অনাবশ্যক লঙ্কাকাণ্ডের অবসান ঘটাইতে পারে।

যে কোনো বসতির সাথে জন্মের একটি যোগসূত্র আছে। নির্বাচন কমিশনের আঁতুড়ঘরে এনআইডির জন্ম। গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে ২০০৭ সালে পাইলট প্রকল্প নামের আঁতুড়ঘর বসিয়াছিল। ইস্ আঁতুড়ঘরের সেই কি নিদারুণ অভিজ্ঞতা! স্বচক্ষে না দেখিলে ইহা বলিয়া বা লিখিয়া হৃদয়াঙ্গম করানো প্রায় অসম্ভব। দুই কোটি ভুয়া ভোটারে অভিযুক্ত ভোটার তালিকা বাতিল করিয়া বিশুদ্ধ তালিকা তৈরি করিতে হইবে। অহর্নিশ কাজ চলিতেছে। দিন-রাত্রীর সীমারেখা সকলে ভুলিয়া গিয়াছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোটারকে নির্ধারিত স্থানে আমন্ত্রণ জানাইয়া যন্ত্রপাতির স্পর্শে বায়োমেট্রিক্স গ্রহণ করিয়া ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করিতে হইবে। ছবি ও বায়োমেট্রিক্স এর কল্যাণে ভুয়া ভোটার প্রবেশের পথ রুদ্ধ হইয়া যাইবে। বাস্তবে ঘটিলও তাই। কিন্তু বাঁধ সাজিল ভোটারের কেন্দ্রে আসিবার অনাগ্রহ। অনাগ্রহ একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। যাহার উপর জোর খাটাইয়া কার্যসিদ্ধির ঘটনা দুনিয়াতে বিরল। আগ্রহ তৈরির গবেষণা চলিতে লাগিল। ফুলেরা কানে কানে বলিয়া দিল, “মধু আছে বলিয়াই ভ্রমর ইহাদের উপর আছাড় খাইয়া পরে”। ফুলেদের কথা মনে ধরিল। ভোটার তালিকায় মধু সঞ্চারণের প্রক্রিয়া শুরু হইয়া গেল। অতঃপর বিশুদ্ধ মধু গায়ে মাখিয়া আঁতুড়ঘর উজ্জ্বল করিয়া ভোটার তালিকার গর্ভে এনআইডি জন্ম নিল। জাতি বিশুদ্ধতম ভোটার তালিকা উপহার হিসাবে লাভ করিল।

এনআইডি জন্মের পরবর্তী ১৮ বছরের ইতিহাস সুখকর নহে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাগণের এনআইডি পরিচর্যার কোন অভিজ্ঞতা বা প্রস্তুতি কোনোটিই ছিল না। এদিকে এনআইডির আকর্ষণে নির্বাচন কমিশনে ভোটারের ভিড় বাড়িতে লাগিল। মাত্র দুইজন করিয়া আউটসোর্সিং অপারেটর যুক্ত করিয়া এনআইডি সেবা মাঠ পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা হইল। অপ্রতুল জনবল, সাথে যন্ত্রপাতির সংকট মাথায় লইয়া নির্বাচন কর্মকর্তাগণ এনআইডি পরিচর্যায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করিতে শুরু করিলেন। দিনশেষে যে সময়টুকুন নিজের পরিবার পরিজনের পাওয়ার কথা ছিল এনআইডি তাহাতে ভাগ বসাইল। নির্বাচন কর্মকর্তার পারিবারিক জীবন আর পারিবারিক রহিল না, এনআইডির আগমনে ইহা অতিষ্ঠ হইয়া উঠিল। উপরন্তু নির্বাচন পরিবারে করোনার অনুপ্রবেশকে এনআইডি সুগম করিয়া দিয়াছে। আর সেই সুযোগে করোনা বহু কর্মকর্তার জীবন প্রদীপ নিভাইয়া দিয়া অগণিত জীবনকে আধমরা করিয়া ক্ষান্ত হইয়াছে। অতিষ্ঠ জীবনের অসহ্য যন্ত্রণায় নির্বাচন কর্মকর্তাগণ দৈনিক কতবার মনে মনে এনআইডিকে নির্বাসন দিয়াছে কে তাহার হিসাব রাখিবে?

যে এনআইডিকে নির্বাচন কর্মকর্তাগণ চুপিসারে বহুবার নির্বাসন দিয়াছেন, সেই এনআইডি নির্বাসিত হইবার অভিমান করিল। কিন্তু মাতৃত্বের আবেগ এই অভিমান সহিতে পারিল না। সকল দুঃখ কষ্ট ভুলিয়া গিয়া নির্বাচন কর্মকর্তাগণ এনআইডি নির্বাসনের বিপক্ষে আন্দোলনে নামিলেন। কথায় বলে আবেগ নাকি বিবেকের গতি মন্থর করিয়া দেয়। কিন্তু সব কিছুরই তো ব্যতিক্রম আছে। মাতৃত্বের আবেগের সাথে প্রেমিক-প্রেমিকার আবেগের কি তুলনা চলে? মাতৃত্বের আবেগ বিবেকবর্জিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া সন্তানের অনিষ্ট করিয়াছে -এমন একটি উদাহরণও কি পৃথিবীতে আছে? আনাড়ী হাত কি কখনো মায়ের হাতের বিকল্প হইবে? এনআইডি না থাকিলে মানুষ কিসের আকর্ষণে ভোটার হইবেন?

কোন অজুহাতে এনআইডি নির্বাসিত হইবে ইহা পরিষ্কার নহে। সেবা গ্রহীতাদের মনোজগতে কি এনআইডি নির্বাসনের আকাঙ্ক্ষা জাগরিত হইয়াছে? এইতো নিকট অতীতে এনআইডি নির্বাসনের খবর যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় চাউর হইয়াছিল, নির্বাচন অফিস গুলি সেবা গ্রহীতাদের বেসামাল ভিড় প্রত্যক্ষ করিল। পত্র পত্রিকায় খবর আসিল, সম্ভাব্য নির্বাসিত ঘরে সেবা পাইবার অনিশ্চিত শংকা অনুরূপ ভিড়ের জন্ম দিয়াছে। তাহা হইলে আলোচ্য ভিড় কি এনআইডি নির্বাসনের পক্ষে বার্তা দিয়াছে?

নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন এনআইডি অনু বিভাগ সামান্য সম্প্রসারণ ও পরিমার্জন করিয়া এন আইডির কাঙ্খিত সুরক্ষা ও পরিচর্যা সম্ভব। যেমন করিয়া সামান্য অর্থ ব্যয়ে জুতা আবিষ্কার করিয়া কার্য হাসিল হইয়াছিল। নচেৎ জুতা আবিষ্কার কবিতার অনুকরণে নস্যভোজীরা অর্থ অপচয় করিয়া জগত ধুলিময় ও কর্দমাক্ত করিয়া ফেলিবে।

লেখক- মোঃ ফখর উদ্দীন শিকদার
সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022
Design & Development by : JM IT SOLUTION