বোয়ালমারী প্রতিনিধিঃ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী ও সালথা উপজেলার সীমান্তে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে নান্নু ফকির (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহতের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সালথা উপজেলার যদুনন্দি বাজারের নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে এবং বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের রূপাপাত বাজারের সামনে কুমার নদের ব্রীজের ওপর দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশসহ দুই পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত বামনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, সালথার যদুনন্দি ইউনিয়নের দর্গাপাড়া গ্রামের কাইয়ুম মোল্যা ও বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউপি চেয়ারম্যান এবং কদমী গ্রামের মিজানুর রহমান সোনা মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিলো। স্থানীয় রূপাপাত বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদ নিয়ে তাদের মধ্যে বিগত কয়েক বছর যাবত বিরোধ চলছে। বুধবার ইফতারের উদ্দেশ্যে রূপাপাত গ্রামের মাফু কসাইয়ের ছেলে নাসরুল (১৬) তার বন্ধু যদুনন্দি গ্রামের ইলিয়াস মোল্যার ছেলে মেহেদী (১৬)কে রূপাপাত বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে যায়। নাসরুল ও মেহেদী উভয়েই ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। নাসরুল ও মেহেদী ওই বিদ্যালয়ে অন্য সহপাঠীদের সাথে ইফতার করে। ইফতারের পরে ইউপি চেয়ারম্যান সোনা মিয়ার ভাই মুরাদের নেতৃত্বে রাকিব, চয়ন, সাকিব, সাদী, তরিকুল, সরিফুল, ইব্রাহিম, কালুসহ ৮/১০ জন মেহেদীকে মারধর করে। নাসরুল মারধরের হাত থেকে বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও আহত হয়। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে যদুনন্দি ও কদমী গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় সালথা উপজেলার যদুনন্দি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের নান্নু ফকিরের ছোট ছেলে মো. মাফুজ ফকির বিকাশ থেকে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন রূপাপাত বাজারে। মারামারির খবর শুনে ছেলে মাফুজ ফকিরকে খুঁজতে গেলে প্রতিপক্ষের এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় রূপাপাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনা মিয়ার লোকেরা ফুলকুচির আঘাতে যদুনন্দি গ্রামের কাইয়ুম মোল্লার সমর্থক নান্নু ফকিরকে মারাত্মক আহত করেন। নান্নুকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। নিহত নান্নু ফকিরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে দুই থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। এ ঘটনায় বোয়ালমারী থানার ডহরনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোক্তার হোসেনও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় দুইপক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। সংঘর্ষের পর থেকে রূপাপাত ও যদুনন্দি বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার ৩টা ১৬ মিনিটে কাইয়ুম মোল্যা এবং ৩টা ১৫ মিনিটে মিজানুর রহমান সোনা মিয়াকে ফোন দেয়া হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী সার্কেল) সুমন কর এবং সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান জানান, রূপাপাত-যদুনন্দি এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় নান্নু ফকির নামে একজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে বোয়ালমারী ও সালথার ১১জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।
Leave a Reply