বোয়ালমারী প্রতিনিধি: বোয়ালমারীতে এক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের রোষানলে পড়ে চাকুরি হারানোর শঙ্কায় প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় শ্রেনীর এক কর্মচারী চরম উৎকন্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ওই কর্মচারীর নাম মোঃ আবু আল-হেলাল। গ্রাম্য দলাদলিতে ভিন্নমতাবলম্বী সন্দেহে তাকে চাকুরীচ্যুত করার দূরাভিসন্ধীতে হেলালের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন স্কুলের প্রধান শিক মোঃ আয়ুব আলী ও সভাপতি মোস্তফা জামান সিদ্দিকী। এ লক্ষ্যে তুচ্ছ ঘটনায় একের পর এক হেলালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ও মিথ্যা আসামী বানিয়ে হয়রানির পাশাপাশি অন্যায়ভাবে কাজে যোগদানে বাধা দিয়ে বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশা ও দৈন্যদশার মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছেন ভুক্তভোগী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গোহাইলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ২০১২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হন আবু আল হেলাল। তৎকালীন সভাপতি অর্থাৎ বর্তমান সভাপতির পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউদ্দীন আহমেদ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে মিনিষ্ট্রি অডিটসহ একাধিক দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের তদন্তেও হেলালের চাকরি বৈধ বিবেচিত হয়। সেই থেকে সুনামের সাথেই হেলাল তার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু গোল বাধে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে। ওই নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি মোস্তফা জামান সিদ্দিকী প্রার্থী একটি প্যানেল দেন। তার বিপক্ষে আরেকটি প্যানেল দেন বাবু বিশ্বনাথ পোদ্দার। অফিস সহকারী আবু আল হেলালের অনেক আত্মীয় স্বজন এ প্যানেলের হয়ে কাজ করেন। ফলে নির্বাচনে মোস্তফার প্যানেল জয়লাভ করলেও হেলাল তাদের ভোট দেয়নি- এমন সন্দেহ বাসা বাঁধে বিজয়ীদের মাঝে। তাছাড়াও এলাকায় মোস্তফা জামানের সঙ্গে রাজনীতি না করা এবং তার প্রতিপক্ষদের সাথে আবু হেলালের যোগসূত্র আছে এমন সন্দেহেও তার প্রতি আগে থেকেই রুষ্ঠ ছিলেন মোস্তফা জামান। আর এসব থেকেই মোস্তফা জামান সিদ্দিকী ও তার অনুগত প্রধান শিক্ষক আয়ুব আলীর বাম নজরে পড়েন আবু আল হেলাল। শুরু হয় নানাভাবে তাকে হেনস্তা করার কলাকৌশল। এমন কি বর্তমানে হেলালকে চাকরিচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন এই দুই কর্তাব্যক্তি। তারা হেলালের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে ছুটি ভোগ, জাল কম্পিউটার সনদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ তুলে একাধিক বার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন। এসবের সঠিক জবাব দেওয়ার পরও অন্যায় ভাবে হেলালের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, বাঁধা প্রদান করা হচ্ছে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও। ৭৩ নং আসামী করা হয়েছে একটি হত্যা মামলায়। মোঃ আবু আল হেলাল জানান, তিনি শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারনে ডাক্তারের পরামর্শে বেশ কিছু দিন ‘বেডরেষ্টে’ ছিলেন। এরপর ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে কয়েক দিন ঢাকায় দৌঁড়-ঝাপ করেন। এ কারনে বেশ কিছু দিন তিনি অফিস কামাই দেন। পরে সুস্থ হয়ে এ বিষয়ে মেডিকেল সনদ জমা দিয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর ছুটি মঞ্জুরের আবেদন করলেও তিনি তা গ্রহণ না করে উল্টো উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে হেলালকে শোকজ করেন। শোকজ নোটিশে হেলালের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে ছুটি ভোগের পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জাল সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগ আনা হয়। হেলাল যথাযথ ভাবে নোটিশের জবাব দিলেও সেটাকে অসন্তোষজনক আখ্যা দিয়ে গত জুন মাস থেকে তার বেতন-ভাতা আটকে দেন প্রধান শিক্ষক। শুধু তাই নয়, সুস্থ হয়ে হেলাল কাজে যোগদান করতে গেলে প্রধান শিক্ষক তাতে বাঁধা দিয়ে হেলালকে অফিস থেকে বের করে দেন। হেলাল প্রশ্ন রেখে বলেন, যে সনদ মূলে বর্তমান সভাপতির বাবা চাকরি দিয়েছিলেন সেই সনদ ১০ বছর পরে এসে ছেলের কাছে জাল হয় কি করে? আবু হেলাল বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। সভাপতি মোস্তফা জামান সিদ্দিকীর সাথে এলাকায় রাজনীতি না করা, তার এবং প্রধান শিকের অবৈধ কার্যকলাপে সমর্থন না দেয়ার কারনে তারা আমার চাকরি খেয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন। একটি হত্যা মামলায় মিথ্যা আসামী বানিয়ে হেনস্থা করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোঃ আয়ুব আলী বলেন, হেলাল প্রায় তিন মাস অফিস করেন না। তার কম্পিউটার সনদ নিয়েও সমস্যা আছে। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকিটা শিক্ষা বোর্ড চূড়ান্ত করবে। অন্যদিকে মাধ্যমিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, জাল যে সনদের কথা বলা হয়েছে তা ওই চাকরির জন্য বাধ্যতামূলক নয়। ওই সার্টিফিকেট না থাকলেও চাকরির কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া একজন কর্মচারীকে সাসপেন্ড করলেও তার সম্পূর্ণ বেতন বন্ধ করা বেআইনি, অমানবিকও বটে। আবু আল হেলালের বিরুদ্ধে যা হয়েছে বা হচ্ছে তা আক্রোশমূলকই মনে হচ্ছে।
Leave a Reply