বিদেশের কারাগারে বন্দী সন্তানদের মুক্তিতে রাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়ে বোয়ালমারীতে দুই বাবার সংবাদ সম্মেলন
জাকির হোসেন,বোয়ালমারীঃ লিবিয়ার কারাগারে বন্দী সন্তানদের মুক্তিতে রাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুই অসহায় বাবা। বুধবার দুপুরে উপজেলার রামনগর গ্রামে নিজ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন মোঃ ইসহাক বিশ্বাস ও মোঃ গোফরান নামের ঐ দুই পিতা। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ২০২১ সালে ইসহাক বিশ্বাসের পুত্র মোঃ নাসির বিশ্বাস (২৫) এবং ২০২২ সালে গোফরান শেখের পুত্র সাব্বির হোসেন(২২) সপ্নের জীবন গড়তে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে একটি রুটির কারখানায় কাজ করে ভালোই চলছিল তাদের প্রবাস জীবন। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাসে স্থানীয় বাংলাদেশী দালালদের প্ররোচনায় লিবিয়ান দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে সপ্নের দেশ ইটালিতে পাড়ি জমাতে গিয়ে কপাল পোড়ে তাদের। দালাল চক্র নাসির ও সাব্বিরকে মোটা টাকায় দেশটির দুর্ধর্ষ অপরাধী গোষ্ঠী মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন। মাফিয়ারা ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছে অর্ধকোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। দাবি আদায়ে ভুক্তভোগীদের উপর সিমাহীন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় অপরাধী গোষ্ঠীটি। দীর্ঘ ২২ দিন মাফিয়াদের জিম্মায় থাকার পর ৪৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মুক্তি পান নাসির ও সাব্বির।খবর পৌছায় লিবিয়ান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কানে। ফলে মাফিয়াদের কবল থেকে মুক্তি মিললেও এবার তারা নতুন করে লিবিয়ান পুলিশের কবলে পরে। অবৈধ অভিবাসী মামলায় দুই মাস জেল হয় সহকর্মী দুই বন্ধুর। পরিতাপের বিষয় হলো,মধ্য এপ্রিলে তাদের শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও অভিভাবক তথা বাংলাদেশী দূতাবাসের হস্তক্ষেপের অভাবে এখনো কারামুক্তি মিলছেনা নাসির ও সাব্বিরের ভাগ্যে। কেননা দূতাবাসের মাধ্যমেই তাদের মুক্তি ও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। সম্মেলনে ইসহাক ও গোফরান বলেন,তারা লোক মাধ্যমে লিবিয়ায় বাংলাদেশী দূতাবাস এবং বাংলাদেশে পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তারা কোন সুফল পাচ্ছেন না। কোন দপ্তরেরই এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা বা নড়াচড়া নেই। ফলে বিদেশের কারাগারে অনিশ্চিত ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের সন্তানদ্বয়। সংবাদ সম্মেলনে কান্না জড়িত কন্ঠে দুই অসহায় বাবা বলেন,সহায়-সম্পদ খুইয়ে ছেলেদের বিদেশ পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু তাদের ভুলের কারণে সব শেষ হয়ে গেলো। মুক্তিপণের টাকা যোগাতে গিয়ে দায়-দেনা হয়ে একে বারে নিঃশ্ব হয়ে গেছি। তারপরও যদি সন্তানকে কাছে পেতাম হয়তো অনেক কষ্ট দূর হতো। কিন্তু দূতাবাসের ভূমিকায় আমরা চরম ভাবে হতাশাগ্রস্ত। ইসহাক বিশ্বাস ও গোফরান বলেন,একদিকে সন্তান কারাগারে,দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই অপরদিকে টাকা-পয়সার শোক সব মিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিদারুণ এক বাস্তবতার মধ্যে জীবন যাপন করছি। এ প্রেক্ষিতে বিদেশের মাটিতে সন্তানদের দ্রুত কারা মুক্তি ও স্বদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাষ্ট্রের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী অসহায় দুই পিতা। উল্লেখ্য,মোঃ গোফরান শেখের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ীতে। সন্তানের প্রবাসী বন্ধুত্বের সুবাদে তিনি বোয়ালমারীতে সংবাদ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন।
Leave a Reply