স্বপন দত্ত # কাদিরদীর ইতিহাসের পরতে পরতে মিশে আছে সাহিত্য ও সাংস্কৃতি, আর এই সাহিত্য সাংস্কৃতির, পরতে পরতে মিশে আছে কিছু মানুষের নাম আর তাদের অক্লান্ত অধ্যবসায় প্ররিশ্রম ঘাম ভাল লাগা ভালবাসা ।
আজ আমি তাদের কথায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো, আপনারা অনেকেই জানেন,কিন্তুু নতুন প্রজন্ম হয়ত অনেকেই জানেনা , একটা সময় কাদিরদীতে ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখ, ইত্যাদি সমস্ত দিবস গুলোতে বিশাল সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো, তাছাড়া স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন সভা সেমিনারকে উপলক্ষ করে এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হতো,
সেই নব্বই দশকের কাদিরদীর সাহিত্য
সাংস্কৃতির আতুর ঘড় হলো এই বাড়ীর এই ঘড়টি, আর যার নামটি প্রথমেই শ্রদ্ধাভারে চলে আসে তিনি #বিকাশ_মাষ্টার,
এখানে কোন অনুষ্ঠান কে সামনে রেখে, দিনের পর দিন রাতের পর রাত জেগে জেগে গান বাদ্য অনুষ্ঠান পরিচালনা পরিবেশনার সমস্ত পূর্ব প্রস্তুতির আয়োজন করা হতো !
এখানে একটা সময় তাদের জীবনের সোনালী দিন গুলো কাটিয়েছেন,
আঃ হালিম শেখ,রাজ্জাক মাষ্টার,আবুল কালাম আজাদ, খায়রুজ্জামান মৃধা,ইদ্রিস আলী,নাহিদ হোসেন, টুটুল, স্বপন দাস, আনিসুরজ্জামান,রাইসুল মুরাদ, ইলিয়াস হোসেন, আওয়াল,আসাদ, আরও অনেকেই যাদের নাম এই মুহুর্তে স্বরণে আসছে না ক্ষমা করবেন ।
এই সকল সাংস্কৃতি প্রিয় মানুষ গুলো ।
কেউ গানের রিহার্সেল, কেউ কবিতা আবৃত্তি, কেউ স্টেজটা কেমন করে কোন পজিশনে করা যায়, কেউ কাদেরকে অতিথি করা যায়, কেউ ডেকোরেটর লাইট সাউন্ড, কারো কারো ঘাম ঝরতো কোথা হতে এর অর্থ আসবে সেই চিন্তাই,ইত্যাদি ইত্যাদি, এভাবেই চলত তাদের নিরলস প্ররিশ্রম প্রচেষ্টা, বহু বাঁধা বিপত্তিরও সম্মুখিন হতে হয়েছে অনেক সময় , এবং তাকে জয় করে, একটা সময় আসতো সেই কাঙ্খিত ক্ষণ, সকল কষ্ট প্ররিশ্রমই যেন রুপ নিত এক আনন্দের মহা সমুদ্রে ।
স্মৃতির জানালায় আজও উকি দেয়,
সৈয়দ নজরুল ইসলাম নসু মিয়ার কাঁপা কাঁপা কন্ঠের নজরুল গীতি,
হালিম শেখ, রাজ্জাক মাষ্টারের সুরেলা কন্ঠের গান, আবুল কালাম আজাদ এর ভরাট কন্ঠের গান, খায়ের মৃধার হারমনিয়াম/কিবোর্ড বাজিয়ে গান, ইদ্রিস আলী ও নাহিদের দরদ মাখা কবিতা পাঠ,
ফারুক হোসেনের অসাধারন উপস্থাপনা, রাইসুল মুরাদের নাটক রচনা, বিদ্যুৎ রাজবংশীর রাত জেগে অনুষ্ঠানের নাম অংকন সহ কাদিরদী শিল্পকলা একাডেমির সকলের সম্মিলিত ক্রীয়া কর্ম, এরাই জন্ম দিয়েছিল বনফুল সাহিত্য অংগন, উচ্ছাস ও মোহনা নাট্য চক্রের ।
এবং কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরণ করছি-
মোঃ হাকিম মোল্যা, ইকবাল মাষ্টার,
আশুতোষ গূহ, জীবন দাস, মান্নাফ মুন্সী,
মোয়াজ্জেম হোসেন, মিজানুর রহমান বাচ্চু,
ও রুপ কুমার স্যার কে ।
সময়ের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ায়,
সে সকল কিছুই আজ অতিথ, জীবন জীবিকার তাগিদে, সময়ের বাস্তব নিষ্ঠুরতায়, সেই সকল গান প্রিয়, প্রান প্রিয় সাংস্কৃতি প্রিয় মানুষ গুলো জীবনের রসদ জোগাতে চলে গেছে স্ব স্ব কর্মে, সেই সাথে কালের বিরুপ রেখায়, অপসংস্কৃতির ধূসর ধুলিমায় ঢেকে গেছে আমাদের কাদিরদীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন ।
পরবর্তিতে বাশার খান, ইকরাম, সুমন ও আমি সহ কয়েক জনে কিছুটা ধরে রাখার চেস্টা করলেও, অপসংস্কৃতির দাপটে, শেষ পর্যন্ত তা সম্ভাব হয় নাই ।
শুধু সময়ের স্বাক্ষী হয়ে, হাজারো স্মৃতি বুকে আক্রে ধরে নিরবে নিবৃতে দাঁড়িয়ে আছে এই ঘড়টি,
কয়েক দিন আগে এই ঘড়টিতে গেলে বিকাশ স্যারের সাথে একান্ত আলাপনে, সেসব দিনের স্মৃতি চারন করে অঝর ধাঁরায় কেঁদে ফেললেন তিনি, অস্রু সিক্ত চোখে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অন্তরের গহিন থেকে, উচ্চরন করলেন সেই সকল মানুষের নাম, যাদের সাথে আনন্দ আড্ডায়, হাঁসি কান্না রাগ অভিমানে, কাটিয়েছেন জীবনের বহু স্মৃতি বিজরিত সময় ।
আমি তাকে শান্তনা দিতে লাগলাম কিন্তু তার দু চোখ বেয়ে অজস্র জল ধারায় গড়িয়ে পরতেই লাগলো, সেই স্মৃতি মাখা স্বপ্নের দিন গুলো………… ।
এই ঘড়টিও হয়ত আর বেশি দিন থাকবে না কালের গর্ভে বিলিন হবে ।
Leave a Reply