1. boalmari@gmail.com : Korban Ali : Korban Ali
  2. boalmaribartabd@gmail.com : administrator : Hasan Mahmud Milu
  3. boalmaribarta@gmail.com : Kurban Ali : Kurban Ali
  4. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন

বোয়ালমারীতে অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে মিছিল, এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

  • Update Time : রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৪২ Time View

আমীর চারু বাবলু: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে অবস্থিত নারী শিক্ষার একমাত্র বিদ্যাপিঠ কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ নিয়ে শুরু হয়েছে অপরাজনীতি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে পুঁজি করে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল শিক্ষার্থীদের দিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের নামে বহিরাগত ছাত্রদের প্রবেশ ও শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে বিক্ষোভ করায় অভিভাবকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও ভয় কাজ করছে।

জানা যায়, কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বহিরাগত কিছু ছাত্রদের প্ররোচনায় প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীরা অধ্যক্ষের পদত্যাগ বা অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে। গত ২৯ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগত ছাত্রদের সাথে অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে মিছিল ও বিক্ষোভ করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়াই বিধি বহির্ভূতভাবে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ সময় তারা বিগত গভর্নিং বডির একটি তদন্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমের হাতে তুলে দেন। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও সদ্য বিলুপ্ত  গভর্নিং বডির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত আয়-ব্যয় ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। প্রতিটি ব্যয়ের আগে নির্ধারিত উপ-কমিটি করে তাদের সুপারিশ মোতাবেক অর্থ বরাদ্দ দেয় গভর্নিং বডি। এখানে এককভাবে অধ্যক্ষের ১ টাকাও খরচ করা বা উত্তোলন করার ক্ষমতা নাই। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি, তাতে সুনির্দিষ্ট ভাবে কোথাও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে, তা উল্লেখ করেনি কমিটি। কেবলমাত্র প্রতীয়মান হয় বা বিশ্বাসযোগ্য নয় শব্দ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লেনদেনে স্বচ্ছতা আনাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও  অধ্যক্ষকে আর্থিক ক্ষমতা থেকে অব্যহতি দেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। তদন্ত কমিটি কোথাও অধ্যক্ষকে অপসারণ বা পদত্যাগের সুপারিশ করেন নাই।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মো. আব্দুর রশিদ জানান- ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আনীত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেই। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আমাদের ১ টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে অধ্যক্ষ মহোদয়ের আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে । তিনি সেটা জমাও দিয়েছেন। পরবর্তী গভর্নিং বডির মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিলো। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি, ফরিদপুর -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  কাজী সিরাজুল ইসলামের কাজের ব্যস্ততায় মিটিং হয়নি। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁর সাথেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। অচিরেই নতুন কমিটি  সভা করে এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমি মনে করি ।

সদ্য বিলুপ্ত গভর্নিং বডির সদস্য মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন – অধ্যক্ষ মহোদয় স্থানীয় শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলের শিকার। তার দায়িত্ব গ্রহণের পর অবকাঠামো ও শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। আমার জানা মতে তিনি নিরেট ভদ্রলোক।  আর কলেজের  একটি আলপিন কিনতে হলেও কমিটির মাধ্যমে কিনতে হয়। আসলে এ কলেজে অধ্যক্ষের দুর্নীতির কোনো সুযোগই নাই।

সাবেক গভর্নিং বডির সদস্য আলী আকবর বলেন- প্রিন্সিপাল ভদ্রলোক মানুষ, আমার মনে হয়- যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সর্বাংশে সত্যি নয়। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ করা কোনো পক্ষেরই  উচিত নয়।

সাবেক গভর্নিং বডি সদস্য খান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন – শিক্ষকদের ভেতরে যে অপরাজনীতি আছে তা আমরা জানি। দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ না থাকায় অনেকে বাঁকা পথে অনৈতিক সুবিধা ভোগী করেছে। মো. ফরিদ আহমেদ এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ১৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ পায়। ২০২১ এ পেয়েছে ২০ জন, ২০২২ এ পেয়েছে ৩৫ জন, ২০২৩- এ জিপিএ পেয়েছে ১৭জন শিক্ষার্থী। অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ যোগদানের পর কলেজটিতে ভৌত-অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, আইসিটির ৪ তলা বিশিষ্ট ভবন ইতোমধ্যেই উদ্বোধন হয়েছে , অনার্স শাখায় ৩ তলা ভবনের কাজ চলমান, এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আদলে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রধান ফটক নির্মিতব্য, কলেজটির  প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি, ফরিদপুর -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী সিরাজুল ইসলামকে উদ্বুদ্ধ করে প্রতিষ্ঠাতার নিজস্ব অর্থায়ন ও সামান্য সরকারি অনুদানে গেটটি নির্মাণাধীন, যা অধ্যক্ষ মহোদয়ের প্রচেষ্টার ফসল।

সম্প্রতি কে বা কারা শিক্ষার্থীদের  ভুল পথে পরিচালিত করে কলেজটিকে অভিভাবক শূন্য করে আবার ফায়দা হাসিলের ধান্ধা শুরু করেছে কিনা তা এলাকার সুশীল সমাজ ও অভিভাবকদের খতিয়ে দেখা উচিত।

ঢাকা হাইকোর্ট এর আইনজীবী, কবি ও কথাসাহিত্যিক অ্যাড. গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন- কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ না করলেও পারতো। তিনি (অধ্যক্ষ) অনিয়ম ও দুর্নীতি করলে তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে বিকল্প অনেক পথ ছিলো। শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ বা স্মারকলিপি দায়ের করতে পারতো। তারা যা করেছে এতে শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাপ্তাহিক চন্দনা সম্পাদক কাজী হাসান ফিরোজ বলেন- নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত ছাত্রদের অনুপ্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে যে বিক্ষোভ করা হয়েছে তা আমার কাছে  ন্যাক্করজনক মনে হয়েছে । বোয়ালমারী বা দেশের কোথাও এ ধরনের আন্দোলন শিক্ষার্থী -শিক্ষকদের মধ্যে দুরত্ব বাড়বে ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে বলে আমি মনে করি ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন- বিগত সময়ে কয়েকজন শিক্ষক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লাগামহীন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফয়দা লুটেছে। অধ্যক্ষ নিয়োগের পর তাদের কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ায় তারা এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিরবে কাজ করে যাচ্ছে।  এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লবে অর্জিত বিজয় আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ বলেন- এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নাই। আয়-ব্যয় সব ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। এবং প্রতিটি প্রকল্প কমিটি সম্পাদন করে থাকে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যে মিথ্যা সেটা প্রমাণসহ আমি গভর্নিং বডির নিকট লিখিত জবাব দিয়েছি। আমি কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আমি সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এ প্রার্থনা করি।

কলেজটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন- শিক্ষার্থীরা আমার নিকট এসেছিল। কলেজটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের একটি লিখিত জবাব তিনি জমা দিয়েছেন, অচিরেই পরবর্তী সভা ডেকে এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে, দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের এ সময় পর্যন্ত ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022
Design & Development by : JM IT SOLUTION