বোয়ালমারী প্রতিনিধিঃ ভোট না দেওয়ায় উদ্দেশ্যমূলক ও বেআইনিভাবে একই গ্রামের ৬৩ সুবিধাভোগীর রেশন কার্ড (১০ টাকার চাউল) বাতিলের অভিযোগ উঠেছে বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে। ঘটনাটি নিয়ে ইউনিয়নের সচেতন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাগেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়,ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড তথা হাসামদিয়া গ্রামের সাহিদ বিশ্বাস,সঞ্জয় শীল,কুদ্দুস মোল্লা,ফাতেমা বেগম,আয়েশা খাতুন সহ মোট ৬৩ টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার উক্ত রেশন কার্ড ভোগ করে আসছিলেন।উচ্চমূল্যের এই বাজারে ১০ টাকা কেজী দরে ৩০ কেজী চাউল কিনতে পেরে জীবন যাত্রায় অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আসছিল নিম্ন আয়ের এ পরিবার গুলো।কিন্তু চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নির্বাচিত হবার পর সম্প্রতি নতুন তালিকা প্রস্তুতের সময় রহস্য জনক ভাবে তাদের কার্ডগুলো বাতিল করে দেন। মাত্র একটি গ্রাম থেকে একই সময়ে এক সঙ্গে এতগুলো কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়। ঝড় ওঠে আলোচনা-সমালোচনার। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী পরিবার গুলো জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর আলোকে ১১ অক্টোবর সকাল ১০ টায় সরেজমিন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একটি টিম। তারা সরাসরি ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন এবং সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। ভুক্তভোগী মোঃ মাসুদ শেখ,সঞ্জয় শীল সহ আরো অনেকে বলেন,আমরা খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ। বিগত চেয়ারম্যান সব কিছু যাচাই-বাছাই করে আমাদের কার্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যানকে আমরা ভোট দেইনি এমন সন্দেহ করেই তিনি আমাদের কার্ড বাতিল করে দিয়েছেন। এমনকি কার্ড নবায়নের কথা বলে ট্যাক্সের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ২৫০ থেকে ৫/৭ শ’করে টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এটা অন্যায়,অমানবিক। কার্ড বাতিল হওয়ায় আমরা এখন চরম দুর্দিনের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু বলেন,ঘটনাটি আমিও জানতে পেরেছি। কার্ড হারিয়ে অনেকেই এখন দিশেহারা। কান্না জড়িত কন্ঠে কেউ-কেউ আমাকে বিষয়টি জানিয়ে সহায়তা চেয়েছেন। রেশন কার্ড দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি মানবিক সহায়তা। এ নিয়ে কোন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা বা অপরাজনীতি মোটেও কাম্য নয়। জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আর্থিক স্বচ্ছলতা,আইডি কার্ডের সমস্যা, একাধিক সুবিধা ভোগ সহ নানা কারনে কার্ড বাতিল হতে পারে। এর পিছনে আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য বা নোংরা রাজনীতির সুযোগ নেই।
বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশে আমি বিষয়টির তদন্ত করছি। ভুক্তভোগীদের সাথে সরাসরি কথা বলেছি। প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। যাচাই-বাছাই শেষে বলতে পারবো আসলে কি কারণে এক সঙ্গে এক গ্রামের এতগুলো কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাত দিয়ে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে, ‘চতুল ইউনিয়নে বাতিলকৃত ৪শ ৮৫টি রেশনের কার্ডধারীদের কার্ড বহালের নিমিত্তে ১৩/১০/২০২২ ইং রোজ- বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চতুল ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply