1. boalmari@gmail.com : Korban Ali : Korban Ali
  2. boalmaribartabd@gmail.com : administrator : Hasan Mahmud Milu
  3. boalmaribarta@gmail.com : Kurban Ali : Kurban Ali
  4. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

বোয়ালমারীতে সন্তানদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে থানায় অভিযোগ দিলো বৃদ্ধ মা-বাবা

  • Update Time : শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৪৬ Time View

 

আমীর চারু বাবলু, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিবেদক:

লোভী ও পাষণ্ড সন্তানদের অত্যাচারে পৈত্রিক বাড়ি ছেড়েও দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে অসহায় বৃদ্ধ আবু বক্কার শেখ ও তার স্ত্রী মতিজান বেগম। রোগে শোকে জরাজীর্ণ দেহে, বেদনা আর বুকভাঙা কষ্ট নিয়ে কোনো মতে বেঁচে আছে বৃদ্ধ দম্পত্তি। বৃদ্ধ আবু বক্কার শেখের ছয় ছেলে, চার মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, ছেলেরাও বিয়ে করে যে যার মতো ভিন্ন হয়ে সংসার পেতেছে।
পৈতৃক ভিটামাটি চার ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যত্রে বসবাস করেন তিনি। বৃদ্ধ আবু বক্কার এখনও নিজের কৃষি জমিতে চাষাবাদ করে। তাতে যে ফসল ফলে- তাই দিয়েই কষ্টেসৃষ্টে স্বামী-স্ত্রী সারা বছর চলেন। বৃদ্ধা মতিজান বেগমও বার্ধক্যজনিত রোগে শোকে কাতর, সন্তানদের অবহেলা, অত্যাচারে মাজার হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে কোমর নিয়ে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারেন না তিনি। তারপরও বৃদ্ধ স্বামী ও নিজের বেঁচে থাকার জন্য রান্না থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ করতে হয় তাকেই। সন্তানদের কেউই তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে নারাজ।কিন্তু পিতার সম্পত্তি, গাছপালা এমনকি ফলফলাদিও নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে জানান বৃদ্ধ আবু বক্কার শেখ।

অশ্রুসিক্ত দু’নয়ন বারবার মুছতে মুছতে আবেগে আপ্লূত কন্ঠে আবু বক্কার শেখ বলেন- নিজের হাতে লাগানো নারকেল গাছের দুটি নারকেল দাবি করায় ছেলে ও পুত্রবধূদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের দুজনকেই।
দুই ছেলে ও পুত্রবধূরা বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে তাকে; স্বামীকে রক্ষা করতে গেলে মাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তারা। সম্প্রতি বসবাস করা নিয়ে ছেলেদের দ্বন্দ্ব মিটাতে গিয়ে তিন ছেলের হামলার শিকার হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পিতা।

ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামে।
এ গ্রামের মৃত আছিরউদ্দীন শেখের ছেলে মো. আবু বক্কার শেখ (৭৫) ও তার বৃদ্ধা স্ত্রী মতিজান (৬৮) ছেলেদের নির্মম অত্যাচার, হুমকি ধামকি, আর শঙ্কা নিয়ে অসহায়ভাবে দিন যাপন করছেন।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বৃদ্ধ মো. আবু বক্কার শেখের ছয় ছেলের মধ্যে চার ছেলেকে নিজের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্রে বাড়ি করেছেন তিনি। এর মধ্যে ফরহাদ শেখ শারীরিক ও মানসিক ভাবে কিছুটা প্রতিবন্ধী। অপর তিন ছেলে মো. গাউস শেখ, ফারুক শেখ ও হোসাইন শেখের অত্যাচারে বোধবুদ্ধিহীন ফরহাদ শেখ টিকতে না পেড়ে বাড়ির পাশের বাঁশ বাগানে বাড়ি করে বসবাস করেন। তারপরও ভাইদের অত্যাচার বন্ধ হয় নাই। সামান্য কারণেই দ্বন্দ্ব বিবাদ জড়িয়ে পড়ে তারা। পিতা হিসেবে সন্তানদের দ্বন্দ্ব নিরসনে শোনা-মেলা করতে গেলেই বড় ছেলে চাকুরিচ্যুত সাবেক বিডিআর সদস্য, বর্তমানে উপজেলার বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের পিওন মো. গাউস শেখ, তার স্ত্রী ময়না ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত আসনের সদস্য আবেদা সুলতানা বন্যা, ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক অপর ছেলে ফারুক শেখ তার স্ত্রী জেসমিন বেগম তাদের উপর হামলে পড়ে। এই তিন ছেলেও তাদের পরিবার বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাইদেরকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। গ্রাম্য মাতব্বর ও প্রতিবেশিরা বার কয়েক শালিশ বৈঠক করলেও একরোখা গাউস শেখের হিংসাত্মক কৌশলের কাছে বারবার পরাজিত হতে হয়েছে সহজসরল আবু বক্কার শেখকে।
বৃদ্ধ আবু বক্কার শেখ ইতোপূর্বে নিজ হাতে রোপিত নারকেল গাছের ফল দাবি করায় মেঝ ছেলে ফারুক শেখ পিতাকে বেধড়ক পেটায়। সে সময় ফারুকের স্ত্রী জেসমিন বেগম উল্টো শ্বশুর ও তিন দেবর এর নামে অভিযোগ দেয় ইউনিয়ন পরিষদে। শালিশ বৈঠকে বড় ছেলে গাউস শেখে ও তার স্ত্রী আবেদা সুলতানা বন্যা প্রভাব খাটিয়ে জরিমানা গুনতে বাধ্য করে এই বৃদ্ধকে। বড় পুত্রবধু বন্যার মামা জর্জ কোটের আইনজীবী ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় হামলার শিকার হয়েও গাউসের সাজানো নাটকে জরিমানা গুনে সে।

সন্তানদের হাতে নির্যাতিত পিতা মো. আবু বক্কার শেখ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন- অনেক কষ্ট করে দশ সন্তানকে লালনপালন করেছি, এর মধ্যে যারা একটু পড়ালেখা শিখেছে ওরাই বেশি নির্যাতন করে আমাদের। ওদের অত্যাচারে তিন ছেলে ইব্রাহিম, রফিক ও হোসাইনকে নিয়ে আলাদা বাড়ি করে বসবাস করে এসছি। এর মধ্যে এক ছেলে অটোরিকশা চালক হোসাইন জমিজমার কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে বড় ভাইদের সাথে জোট বাধে। আমার আধপাগলা ছেলে ফরহাদ পুরনো বাড়িতেই ছিলো। সে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার পৈতৃক ভিটার পাশে বাঁশ বাগানে বাড়ি করেছে। তাও তাদের অত্যাচার থামেনি। মাসখানেক আগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধমানুষ ছেলেটিকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে বড় ছেলে গাউস, ফারুক ও হোসাইন। সে দৌঁড়ে না পালালে ওরা তাকে মেরে ফেলতো, আমার আধমানুষ ছেলেটাকে ওরা মেরে ফেলবে। পুরোন বাড়িতে থাকা রফিক পাগল ভাইয়ের পক্ষ নেওয়ায় তার উপর হামলা চালায়, তার ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা। শোরগোল ও প্রতিবেশিদের কাছে খবর পেয়ে আমি, আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বড় ছেলে গাউসের নেতৃত্বে আমাদের উপরও হামলা চালায় তারা। তাদের লাঠির আঘাতে ছোট ছেলে ইব্রাহিমের মাথা ফেটে যায়। বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটায়। প্রতিবেশীগণ আমাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। প্রতিবেশিদের কেউ একজন সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে যায়। পরে
থানায় পাষণ্ড সন্তানের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। উল্টো বড় ছেলে গাউস প্রতিবেশিরা আমাদের সাহায্য করায় তাদের নামে সাজানো মিথ্যা মামলা করেছে। এখন গাউস, ফারুক আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।

আবু বক্কার শেখের স্ত্রী মতিজান বেগম জানান, খাইয়ে না খাইয়ে ছেলেমেয়ে মানুষ করছি। আমারই পেটের ছেলে আমার গলা চিপেধরে উঠনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। বাবারে, আমার মাজা ভাইঙ্গে গেছে, দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। ওগো অত্যাচারে শ্বশুরের ভিটে ছাড়ছি। তাও ওরা আমাদের ছাড়েনা। আমি এর বিচার চাই।

বৃদ্ধের ছোট ছেলে ইব্রাহিম শেখ বলেন – আমার ভাই হোসাইন শেখসহ আমরা এই বাড়িতে ছিলাম সে বড়ভাইদের সাথে আঁতাত করে আব্বার ঘর থেকে আমাদের জমি-জায়গার দলিল পত্র চুরি করে পুরনো বাড়ি গিয়ে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেছে। সে আমার মাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। মা এখনো চলতে ফিরতে পারেনা।

অভিযুক্ত ফারুক শেখ প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে পিতাকে মারপিট করার কথা অস্বীকার করেন।
সাবেক ইউপি সদস্য আবেদা সুলতানা বন্যা – শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও দেবরদের দ্বারা তারা নির্যাতিত বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলার খরসুতিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে গিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী গাউস শেখের নিকট বিষয়ে জানতে চাইলে – বসবাস নিয়ে ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে স্বীকার করলেও তিনি বলেন- আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা।

এ বিষয়ে ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা বলেন- লোকমুখে শুনেছি বানিয়ারীর আবু বক্কার শেখের ছেলেরা ভাই-ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বে পিতার গায়ে হাত তুলেছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসে নাই, আমার কাছে এলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মাদ গোলাম রসুল বলেন- ২ টি অভিযোগ আমাদের তদন্ত ওসির নিকট আসে, বিষয়টি তদন্ত চলছে, যেহেতু এটি পারিবারিক ঝামেলা ভাই-ভাই, পিতা-সন্তানের মধ্যের ঘটনা, তাদের ডেকে উভয় পক্ষ যেটা চায় সে ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022
Design & Development by : JM IT SOLUTION